ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের চৗফলদন্ডীর রাখাইনদের জীবন-জীবিকা চরম হুমকিতে

সেলিম উদ্দিন, কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে বেড়িবাঁধের সাথেই লাগোয়া গ্রামটির নাম চৌফলদন্ডী। পাশেই কক্সবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী বাকঁখালী নদী। রাখাইন সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকা মগপাড়া। সেখানেই গ্রামটির শুরু। বিশাল এক বেড়িবাঁধ। তার পাড়ে সারিবদ্ধভাবে শুকানো হচ্ছে নাপ্পি নামক এক ধরণের মাছ। মনে হয় মাছের রাজ্যে। সম্প্রতি কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের রাখাইন পল¬ীতে গিয়ে কথা হয় তাদের সাথে। ছোট ছোট ঘর গৃহস্থলির ঘেরাটোপে কোনমতে টিকে আছেন রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন।

তবে এখন তাদের জীবনে বড়ই দুর্দিন। অনেকেই টিকতে না পেরে ছেড়েছেন পৈতৃক পেশা। জন্মভিটা ছেড়ে অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন অন্য জায়গায়। কারণ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজশে মিথ্যা দলিলের মাধ্যমে জায়াগা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি হরণ করা হচ্ছে রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহি জীবন জীবিকাও। যদিও সেখানে আজও কিছু পরিবার কোনোভাবে টিকে আছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে গ্রামটিতে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় রাখাইনদের সাথে। চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের রাখাইন পাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন অর্ধশতাধিক পরিবারের প্রায় হাজার দেড়েক মানুষ। আগে প্রায় শতাধিক পরিবার বাস করতেন। অনেকেই চলে গেছেন। নারী-পুরুষের মিলিত শ্রমে গড়া এই পেশাকে গ্রামটির অনেক পরিবারকে অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মাঝেও স্বচ্ছলতা না এলেও তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। আর তাদের আয়ের একমাত্র উৎস নাপ্পি। স্থানীয় ভাষায় যা নাপ্পি নামে পরিচিত। সাগর থেকে ছোট ছোট চিংড়ি মাছ এনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয় নাপ্পি ।

পরবর্তীতে যা পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এই নাপ্পি বিক্রির উপরই নির্ভর করে চলে তাদের সংসার। কিন্তু সেই রাখাইনদের জীবিকার প্রধান স্থান বেড়িবাঁধটি দিন দিন চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের দখলে। বাঁধ সংলগ্ন জায়গায় দখলদাররা নির্মাণ করছেন অবৈধ দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের বাধাও কোন কাজে আসেনি। উল্টো বাধা উপেক্ষা করে নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা।

স্থানীয় নাপ্পি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা রাখাইনরা বলেন, আগে প্রায় ৫ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই বাঁধেই নাপ্পি মাছ শুকাতো রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদারদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ায় তা ২ থেকে ৩ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে তাদের পেশা বদলানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।

ইউপি মেম্বার ওসাচি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের সাগর সংলগ্ন ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া, মগপাড়া, জালিয়াপাড়া, মাঝরপাড়া,মধ্যমপাড়ায় নাপ্পি মাছ শুকানো রাখাইন সম্প্রদায়ের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের কারণে এভাবে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যেতে থাকলে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না।

পাঠকের মতামত: